বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ কিফায়ত উল্লাহ, কনাফ (কক্সবাজার): মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের ভাব পড়েছে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যে। টেকনাফ স্থলবন্দরে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। সীমান্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে ভাটা। গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে কোন পণ্যেবাহি ট্রলার আসেনি। মূলত জলপথে ‘আরাকান আর্মির’ প্রতিবন্ধকতায় স্থলবন্দরে পণ্যেবাহি ট্রলার আসছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
স্থলবন্দরের কাস্টম সুত্রে মতে, সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে ৩ ডিসেম্বর পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। মূলত আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতার কারনে গত ৮ ডিসেম্বর মংডু শহর দখল নেওয়ার পর এই স্থলবন্দরে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে, যা আকিয়াব থেকে কোন পণ্যেবাহি ট্রলার আসেনি। তবে মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে পণ্যেবাহি ট্রলার আসছে না। তবে আমাদের সরকার সেদেশের দুপক্ষের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই ভালো সুফল আসবে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে টেকনাফ বন্দরে মাসে অন্তত ২০০ ইঞ্জিনচালিত বড় বোটে পণ্য আনা-নেওয়া হতো। গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে অনেকট। ডিসেম্বরে স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় মাত্র ৬ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে আদায় হয় ২০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক সময়ে ৪০-৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয় টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে। এছাড়া স্বাভাবিক সময় বন্দরে দিনে ১৫-২০টি নানা ধরনের ট্রলার ও জাহাজ থাকে।
বন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা জানায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২৩ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্যে আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে সরকার ২৫৭ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। গেল বছর (২০২৪-২৫) অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার মেট্রিক টন আমদানি হয়। যার ফলে সরকার ৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছি। অন্যদিকে গত দুই অর্থ বছরে যেসব পণ্যে রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিমেন্ট। গত ২৩-২৪ অর্থ বছরের সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে ২৩৬ মেট্রিক টন। যার মূল্য ১ কোটি ১৩ লাখের অধিক টাকা মূল্যের সিমেন্ট। এছাড়া চলতি ২৪-২৫ অর্থ বছরে ২৯১ মেট্রিন টন সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে। যার মূল্য ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলের পরে মূলত এ বন্দরে পণ্যেবাহি জাহাজ আসেনি। কারন তাঁরা (আরাকান আর্মি) প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। সেজন্য পণ্যে জাহাজ আসতে পারছে না। তবে সরকার সেদেশের দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করছে, যাতে সীমান্তের বাণিজ্যে স্বাভাবিক থাকে।
সরেজমিনে সোমবার টেকনাফ সদরের কেরুনতলী এলাকায় স্থলবন্দরে কোন মানুষ জনের দেখা মেলেনি। জেটিঘাটগুলো ফাকা দেখা গেছে।
এসময় স্থলবন্দরের কথা হয় ব্যবসায়ী কামরুল হাসান তিনি বলেন,রাখাইনে যুদ্ধের কারনে অনেক দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ আছে। এতে আমাদের অনেক লোকজন কর্মহীন দিন কাটছে। এই ব্যবসায়ী বলেন, মালামালের জন্য আমাদের অগ্রিম টাকা সেদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধের কারনে মালামাল আসতে পারছে না। এতে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পরতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ বন্দরের মহাব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে কোন পণ্যেবাহি জাহাজ আসেনি। মূলত রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলের নেওয়ার পর কোন পণ্যেবাহি জাহাজ বন্দরে আসেনি। তবে সিমেন্টসহ কিছু পণ্যে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সময়ে সীমান্ত পরির্দশনে এসে স্বরাষ্ট উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় দেশটির বিপ্লবী গোষ্ঠি পাশাপাশি সরকার যেহেতু এখনো জান্তা, তাই দু পক্ষের সাথেই যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। আমাদের স্বার্থ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রথম থেকে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।